ঈমান

Latest Newsঈমান

আল-কুরআনের আলোকে আল্লাহর প্রতি ঈমান (১ম)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

সম্মানিত ভাই ও বোনেরা আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান সম্পর্কে কিছু আলোচনা করব। আমার এই ছোট্ট জ্ঞান দ্বারা আমি যতটুকু পারি আপনাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। আমরা সকলেই জানি যে ঈমান অর্থ হলো বিশ্বাস আর পরিপূর্ণ ঈমানের হাকিকত হল তিনটি, মুখে স্বীকার করা, অন্তরে বিশ্বাস করা,কাজে পরিণত করা, ঈমান হচ্ছে অবিচল বা দৃঢ় বিশ্বাসের নাম,

সুতারাং ঈমানের পরে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকলে মুমিন হওয়া যাবে না। বিশ্বাস যদি দৃঢ়-ই না হয় তবে তা ঈমান কিভাবে হয়। ঈমানে কোন অজ্ঞতা; অনুমান; কল্পনা; সন্দেহ বা কুসংস্কারের অবকাশ নেই, ‘যেমন আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,

اِنَّمَا  الۡمُؤۡمِنُوۡنَ  الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ  ثُمَّ لَمۡ یَرۡتَابُوۡا وَ جٰہَدُوۡا بِاَمۡوَالِہِمۡ وَ اَنۡفُسِہِمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ اُولٰٓئِکَ  ہُمُ  الصّٰدِقُوۡنَ

“তারাই তো মুমিন, যারা আল্লাহ্‌ ও তঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি এবং তাদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই সত্যনিষ্ঠ” (৪৯:১৫)

ذٰلِکَ  الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ ۚۖۛ فِیۡہِ ۚۛ ہُدًی  لِّلۡمُتَّقِیۡنَ

“এটা সে কিতাব; যাতে কোন সন্দেহ নেই মুত্তাকীদের জন্য  হেদায়েত” (২:২)

اَلۡحَقُّ  مِنۡ رَّبِّکَ فَلَا تَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡمُمۡتَرِیۡنَ

“সত্য আপনার রব-এর কাছ থেকে পাঠানো। কাজেই আপনি সন্দিহানদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না” (২:১৪৭)
ঈমান

আল-কুরআনের আলোকে আল্লাহর প্রতি ঈমান

আস্সালামুন আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লহি ওয়াবারকাতুহ!

আল-কুরআনের আলোকে ঈমানের সজ্ঞা!!

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! আমরা কিছু দিন পূর্বে সৎকাজ ও সৎকাজে সহযোগীতা এবং প্রতিযোগীতা বিষয়ে আলোচনা আল-কুরআনের আলোকে উপস্থাপন করেছি। তাই আজকে আমরা আল-কুরআনের আলোকে সৎকাজের প্রথম ধাপ নিয়ে আলোচনা করবো। দেখুন আল-কুরআনের আলোকে সর্বপ্রথম সৎকাজ কি? যেমন মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا ۖ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ

প্রথমত আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস স্থাপনের দু’টি স্তর রয়েছে

“ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরাবে; বরং ভালো কাজ হল যে ঈমান আনে আল্লাহর প্রতি, শেষ দিবস, মালাঈকাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ দান করে তার প্রতি আসক্তি সত্তে¡ও নিকটাত্মীয়গণকে, ইয়াতীম, অসহয়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দিমুক্তিতে এবং যে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে, যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুক্তাকী।” (সূরা আল-বাক্বারা ২:১৭৭)

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! আল্লাহ রব্বুল আলামীন যেহেতু কুরআনে সৎকাজের প্রথম বিষয়টি “আল্লাহর প্রতি ঈমান” এনেছেন তাই আজকে আমরা আল-কুরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহর প্রতি ঈমান বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করবো। ইন্শাআল্লাহ

وَمَا تَوْفِيقِي إِلَّا بِاللَّهِ ۚ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ

“আল্লাহর সহায়তা ছাড়া আমার কোন তওফীক নেই। আমি তাঁরই উপর তাওয়াক্কুল করেছি এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাই।” (সূরা হুদ ১১:৮৮)

আমরা একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াস করেছি “আল-কুরআনের আলোকে আল্লাহর প্রতি ঈমান” যা আমাদের মুসলিম হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম ঘাটি অর্থাৎ ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তির প্রধানতম মূল ভিত্তি। সাধারণত ইসলামের এ পাঁচটি মূল ভিত্তি সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা আছে তা সত্তেও এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আল-কুরআনের আলোকে জানার ও আলোচনা করার চেষ্টা করবো। ইন্শাআল্লাহ

আমরা সকলেই ঈমান শব্দের সাথে পরিচিত। ঈমান শব্দের অর্থ হলো বিশ্বাস। পরিভাষায় ঈমান তিনটি জিনিসের সমন্ময়কে বলা হয়। (১) মুখে শিকার করা। (২) অন্তরে বিশ্বাস করা। (৩) কাজে পরিনত করা। এ তিনটি বিষয়ের সমষ্টিকে ঈমান বলা হয়। অর্থাৎ একজন মানুষ তার মুখ থেকে যে কথাটি বলে ঐ কথা অন্তরে ধারণ করে তা কাজে/কর্মে পরিনত করার নাম ঈমান। আর এ তিনটি বিষয়ের কোন একটি বাদ দিলে ঈমান হবে না।

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! আমরা এখন ঈমানের প্রথম ধাপ তথা মুখে শিকার করা নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন দেখি আল্লাহ রব্বুল আলামীন আল-কুরআনে কিভাবে আমাদের কে মুখে শিকার করা শিক্ষা দিলেন। যেমন মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنزِلَ إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ

“তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর ও যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের সন্তানদের উপর আর যা প্রদান করা হয়েছে মূসা ও ঈসাকে এবং যা প্রদান করা হয়েছে তাদের রবের পক্ষ হতে নবীগণকে। আমরা তাদের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই অনুগত।” (সূরা আল-বাক্বারা ২:১৩৬)

قُلْ آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنزِلَ عَلَيْنَا وَمَا أُنزِلَ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَالنَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ

“বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর, আর যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের সন্তানদের উপর। আর যা দেওয়া হয়েছে মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীকে তাদের রবের পক্ষ থেকে, আমরা তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আমরা তারই প্রতি আত্মসমর্পণকারী।” (সূরা আল-ইমরান ৩:৮৪)

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! উপরের দু’টি আয়াতে আমরা দেখেছি যে, আল্লাহ রব্বুল আলামীন قُولُوا – قُلْ “তোমরা বল এবং বল” শব্দদয় ব্যবহার করে আমাদের মুখ থেকে কিভাবে ঈমানের স্বীকৃতি জানাতে হবে তা শিক্ষা দিলেন। আর যারা মুখে শিকার করেছে অর্থাৎ মুখে বলেছে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন বলে আক্ষায়ীত করে ঈমান আনার নিদের্শ দিয়ে বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَىٰ رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنزَلَ مِن قَبْلُ ۚ وَمَن يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا

“হে মুমিনগণ, তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি পূর্বে নাযিল করেছেন। আর যে আল্লাহ, তাঁর মালাঈকাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিনকে অস্বীকার করবে, সে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত হবে।” (সূরা আন-নিসা ৪:১৩৬)

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! উপরে আমরা ঈমানের প্রথম ধাপ তাথা মুখের স্বীকৃতি অর্থাৎ মুখে বলার বিষয়টি আলোচনা করেছি এখন আমরা আলোচনা করবো ঈমানের দ্বিতীয় ধাপ তথা অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন। আমরা জানি ঈমান হচ্ছে তিনটি বিষয়ের সমন্মেয়ে গঠিত একটি বিষয় যার একটিকেও বাদ দিলে ঈমান আনা সম্ভব নয়। আর যাদের অন্তরে মুখের স্বীকৃতি অনুযায়ী ঈমান তথা বিশ্বাস থাকে না তারা কখনোই মু‘মিন হতে পারে না। চলুন দেখি আল্লাহ রব্বুল আলামীন অন্তরে ঈমানের বিষয় কি বলেছেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ لَا يَحْزُنكَ الَّذِينَ يُسَارِعُونَ فِي الْكُفْرِ مِنَ الَّذِينَ قَالُوا آمَنَّا بِأَفْوَاهِهِمْ وَلَمْ تُؤْمِن قُلُوبُهُمْ

“হে রাসূল, তোমাকে যেন তারা চিন্তিত না করে, যারা কুফরে দ্রæত ছুটছে- তাদের থেকে, যারা তাদের মুখে বলে ‘ঈমান এনেছি’ কিন্তু তাদের অন্তর ঈমান আনেনি।” (সূরা আল-মায়িদা ৫:৪১)

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন,

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ

“আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’ অথচ তারা মু‘মিন নয়।” (সূরা আল-বাক্বারা ২:৮)

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! উপরের আয়াতগুলো দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে যে মুখে ঈমানের দাবি করলেই ঈমানদার হওয়া যায় না। অন্তরেও তা পরিপূর্ণ ভাবে বিশ্বাস থাকতে হয়। তা না হলে মু‘মিন হওয়া যায় না। এখন আমরা আলোচনা করবো ঈমানের তৃতীয় ধাপ তথা মুখে স্বীকার ও অন্তরে বিশ্বাস অনুযায়ী কাজে তা পরিনত করা। উপরের দু‘টি বিষয় অনুযায়ী তা কাজে পরিনত করতে পারলেই পরিপূর্ণ মু‘মিন হওয়া সম্ভব। কেননা মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন,

أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ – وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۖ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ

“মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী।” (সূরা আল-আনকাবূত ২৯:২)

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! উপরের আয়াতে আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদেরকে প্রশ্ন করেছেন যে, তোমরা কি এটা মনে করেছো যে, তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে না। অর্থাৎ আমাদের প্রত্যেকেই আল্লাহ রব্বুল আলামীন প্রশ্ন করবেন। কেননা এ পৃথিবীর জীবনটাই পরীক্ষা কেন্দ্র। আর এ পরিক্ষায় পাশ করতে হলে আল্লাহ তা‘আলার দেওয়া প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে হবে। একটি উদাহরণ দিলে স্পষ্ট হয়ে যাবে ধরুন আপনি কোন একটি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে অধ্যায়ন করেন। আপনার সিলেবাসে একটি বই আছে। বইটি আপনার পরিপূর্ণ মুখস্ত এবং লিখতেও পারবেন। ঠিক তখনই আপনার বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হইলো তখন আপনি পরীক্ষা কেন্দ্রেও গেলেন পরীক্ষক আপনাকে খাতা ও প্রশ্নপত্র দিলো কিন্তু আপনি বসে সময় পার করে দিলেন বা প্রশ্ন ব্যতিত অন্য কোন বিষয় খাতায় লিখলেন। আপনি কি ঐ পরীক্ষায় পাশ করতে পারবেন? অবশ্যই না। ঠিক তদরূপ আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের জন্য যে, পরীক্ষার আয়োজন করেছেন সে পরীক্ষায় যদি আমরা সঠিক উত্তর দিতে পারি তহলেই কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে অর্থাৎ পাশ করা যাবে। এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, পরীক্ষা কেন্দ্র কোথায় পাবো আর প্রশ্নপত্র কে দিবে? এর উত্তর হলো আল্লাহ তা‘আই দিয়েছেন। যেমন মহন আল্লাহ বলেন,

الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ

“যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল।” (সূরা আল-মুলক ৬৭:২)

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের জন্য একটি পরীক্ষার আয়োজন করেছেন এবং প্রশ্নপত্র দিয়েছেন। পরীক্ষাটির নাম হচ্ছে দুনিয়ার জীবন এবং প্রশ্নপত্রের নাম হচ্ছে আল-কুরআন। আর এর পরীক্ষার্থী হচ্ছে মানুষ ও জ¦ীন। পরীক্ষা কেন্দ্রে যেমন পরীক্ষার প্রশ্ন ব্যতিত অন্য কোন বিষয় খাতায় লিখলে পরীক্ষায় পাশ করা যায় না ঠিক তেমনি আল্লাহর দেওয়া পরীক্ষা কেন্দ্রে এসে আল্লাহর দেওয়া প্রশ্ন বাদ দিয়ে আমল করলে আল্লাহর দেওয়া পরীক্ষায়ও পাশ করা যাবে না। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত হলো পরীক্ষা দিতে এসে সময় অপচয় না করে কাঙ্খিত সাফল্যের জন্য প্রশ্নপত্র তথা আল-কুরআন অনুযায়ী ঈমান এনে তা অনুযায়ী আমল করে কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করা। আর এ কথাটাই আল্লাহ রব্বুল আলামীন সূরা আল-বাক্বারার ৩ – ৫ নং আয়াতে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। যেমন মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ – وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ – أُولَٰئِكَ عَلَىٰ هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

“যারা গায়েবের (অদৃশ্যে আল্লাহর) প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে (আল্লাহর বিধি-বিধান যথাযথ পালন করে) এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা আপনার প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে। আর অখিরাতের প্রতি তারা ইয়াকীন রাখে। তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়াতের উপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।” (সূরা আল-বাক্বারা ২:৩-৫)

       সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! এখন আমরা আলোচনা করবো “আল্লাহর প্রতি ঈমান” নিয়ে। কেননা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান না থাকলে আমরা কখনোই মু‘মিন মুসলিম হতে পারবো না। আর আল্লাহর প্রতি ঈমানের বিষয়টি যদি আমাদের কাছে স্পষ্ট না থাকে তাহলে আমরা তাঁর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান আনতে পারবো না। তাই আমাদেরকে পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে হলে আল্লাহ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা আমাদের কে তাঁর প্রতি কোন কোন বিষয় সম্পর্কে ঈমান তথা বিশ্বাস আনতে বলেছেন। সে সকল বিষয় আল্লাহর প্রতি একক ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা। বিশেষ করে আল্লাহ সম্পর্কে সকল বিষয় একভূত করা তথা এক বলে গ্রহণ করা। আল্লাহর প্রতি ঈমানের ক্ষেত্রে সকল কিছিুকে পৃথক করে একছত্রভাবে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হবে। কেননা এর ব্যতিক্রম হলে আমরা মু‘মিন হতে পারবো না। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُم بِاللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشْرِكُونَ

“তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তবে শিরক করা অবস্থায়।” (সূরা ইউসূফ ১২:১০৬)

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! আমরা যদি উপরের আয়াতটির দিকে একটু লক্ষ করি যে, আল্লাহ রব্বুল আলামীন উক্ত আয়াতে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তোমরা অধিকাংশই আল্লাহ প্রতি বিশ্বাস কর তবে শিরক করা অবস্থায়। যেমন আমরা আমাদেরকে নিয়ে একটু ভেবে দেখিতো যে আমরা কি এ আয়াতের অন্তরভূক্ত আছি কিনা? ধরুন আমাদের বাংলাদেশে ৯০% মানুষ মুসলিম দাবিদার কিন্তু এর অধিকাংশ মানুষই আল্লাহর সাথে শিরকে লিপ্ত আছে, যেমন একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আল্লাহ রব্বুল আলামীন কুরআনে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন যে, “বিধানদাতা/হুকুমদাতা একমাত্র আল্লাহ” কিন্তু আমাদের অধিকাংশ মানুষই আল্লাহর সাথে তাঁরই প্রেরিত রাসূল (স.) কে বিধানদাতা হিসেবে বিশ্বাস করে এসেছি এবং গ্রহণ করে আছি। আর ঠিক এরকম অসংখ্য বিষয় রয়েছে যা আমরা আল্লাহ সাথে অন্যকেও মিশ্রিত করে বিশ্বাস করে থাকি। যার করণেই আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সত্তে¡ও মুশরিক। আর এর থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলার প্রতি যথাযথ ঈমান তথা বিশ্বাস আনতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করা যাবে না বা বিশ্বাস স্থাপন করা যাবে না। আর এজন্যই আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি ঈমান বিষয়টি পরিপূর্ণ ভাবে জানতে হবে। তহলেই আমরা আল্লাহর প্রতি যথাযথ ভাবে ঈমান আনতে তথা বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবো। আল্লাহর প্রতি ঈমানের অনেকগুলো দিকে রয়েছে। আমরা প্রতিটি দিকে নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইন্শাআল্লাহু তা‘আলা। চলুন আমরা প্রথমে আল্লাহর প্রতি ঈমান কিভাবে আনতে হবে তা আল-কুরআন থেকে দেখি। যেমম, মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন,

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ – اللَّهُ الصَّمَدُ – لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ – وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

“বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি। আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই।” (সূরা আল-ইখলাস ১১২:১-৪)

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! উপরোক্ত সূরাটি দ্বারা আমরা স্পষ্টভাবে জানতে পারলাম যে, আল্লাহ রব্বুল আলামীনের প্রতি কিভাবে ঈমানের স্বীকৃতি জানাতে হবে। আর এসূরাটির মাধ্যমে এটিও স্পষ্ট হয়েছে যে, আল্লাহর প্রতি ঈমান বলতে তাঁর তাওহীদের প্রতি ঈমান আনা বা বিশ্বাস স্থাপন করাকে বুঝায়। তাওহীদ শব্দের অর্থ ‘এক করা, এক বানানো, একত্রিত করা। আর আল্লাহর প্রতি তাওহীদ হচ্ছে আল্লাহর একত্বে বিশ^াস করা। আর আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস স্থাপনের দু’টি স্তর রয়েছে। যেমন নিম্নের আলোচনা করা হলো।